বাংলাদেশের মডেল গ্রাম হুলহুলিয়া
বাংলাদেশের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ও ব্যতিক্রমী এক মডেল গ্রাম হুলহুলিয়া। ১২টি পাড়ায় বিভক্ত, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত হুলহুলিয়া গ্রাম। এ গ্রামের সকলের মধ্যে রয়েছে ভাতৃত্ব ও সম্প্রতির এক অবিচ্ছেদ্দ বন্ধন। যে গ্রামের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশ-বিদেশে। হুলহুলিয়ার আলোকবর্তীকা হিসেবে ১৯৪০ সাল থেকে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ। নিজস্ব সংবিধানে চলে গ্রামের সকল কার্যক্রম ও বিচার ব্যবস্থা। সামাজিকতার বন্ধনে সবাই আবদ্ধ। এ গ্রামে নেই নিরক্ষর মানুষ, নেই বাল্য বিবাহ, যৌতুক প্রথা ও অসামাজিক কর্মকান্ড। গ্রামের সবাই সমাজবদ্ধ। গ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে নেই কোন কোন্দল, নেই হিংসা বিদ্বেষ। শতভাগ স্যানিটেশন গ্রামের নাম হুলহুলিয়া। স্বাধীনতার পর বিশেষ কোন কারণ ছাড়া গ্রামের কেউ মামলা করতে থানায় যায়নি। রাষ্ট্রের মধ্যে যেন আরেকটি ছোট্ট রাষ্ট। নিজেদের অনুদানে চলছে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, ক্লাব সহ অনেক প্রতিষ্ঠান।
আধুনিক হুলহুলিয়া গঠনে যাঁদের অবদান অনসিকার্য্য, সেইসব কৃতি সন্তান শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক মরহুম মছির উদ্দন মৃধা, শিক্ষাবিদ মরহুম মফিজ উদ্দিন পন্ডিত, শিক্ষাবিদ মরহুম ফরিদ উদ্দিন শাহ্, মরহুম হানিফ উদ্দিন মিঞা (পরিচালক, আনবিক শক্তি কমিশন), মরহুম একে তালুকদার (যুগ্ম সচিব আইন মন্ত্রণালয়), এম,এম রহমত উল্লাহ (সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক), শিক্ষাবিদ ও পল্লী কবি ডা. সফিউদ্দিন সরদার, মরহুম হাজী ঝুমুর সরদার, মরহুম হাজী আমীর সরদার, মরহুম ডা. গাউসুল ইসলাম বাদশা মৃধা, এছাড়াও গ্রাম পরিচালনায় মরহুম জালাল উদ্দীন মৃধা, মরহুম আবুল কালাম আজাদ মৃধা, মরহুম আফতাব উদ্দীন মৃধা, মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক, মরহুম মিজানুর রহমান বাবুল সরদার সহ সংশ্লিস্ট সকলকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই।
এক নজরে আমাদের প্রিয় গ্রাম
হুলহুলিয়া
হুলহুলিয়া গ্রাম আমাদের গর্বের স্থান, যেখানে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মিলেমিশে এক অদ্বিতীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। আমাদের গ্রামে এসে স্থানীয়দের জীবনযাপন, ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান ও খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করে আপনিও হুলহুলিয়ার অমূল্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
আমাদের প্রতিষ্ঠানসমূহ
মসজিদ
হুলহুলিয়া গ্রামের শতভাগ মানুষ মুসলমান৷ ধর্মের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ধর্মভীরু, তবে ধর্মান্ধ নয়৷ ইসলাম কর্তৃক নির্দেশিত পথে নিজে অনুসরণ এবং অন্যকে অনুকরণ করতে সদা সচেষ্ট৷ এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মরহুম সমতুল্ল্যাহ প্রামানিক সর্বপ্রথম ১৩১৭ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৯১০ সালে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন একটি সুরম্য পাকা মসজিদ নির্মাণ করেন৷ নির্মাণপূর্ব এ মসজিদের ব্যয় নির্বাহ করার জন্য তিনি প্রায় ষোল বিঘা জমি এককালীন দান করে যান৷
প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিক্ষা বিস্তারের সোপান হিসাবে বিবেচিত, যেখান থেকে একজন শিশুর প্রথম হাতেখড়ি সেই হুলহুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্কুলের ভবন নির্মানের জন্য জায়গা দান করেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব আফতাব উদ্দিন মৃধা।
মাদ্রাসা
সিংড়া উপজেলা থেকে পায়ে হাঁটা রাস্তায় ছ্য় কিলোমিটার পথ হল হুলহুলিয়া গ্রাম। প্রাথমিক শিক্ষা একজন মানুষের তার জিবনের মৌলিক শিক্ষার শুরু। এই শিক্ষা কে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন উচ্চ বিদ্যালয়।
ডাকঘর
সিংড়া উপজেলা থেকে আঁকা বাঁকা পায়ে হাটা রাস্থায় ছয় কিলোমিটারের পথ হলো হুলহুলিয়া গ্রাম৷ এ গ্রামে একটি ডাকঘর স্থাপনের জন্যশিক্ষা অনুরাগী জনাব মোঃ মফিজ উদ্দিন প্রামানিক (হেড পুন্ডিত)এর অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং সকল গ্রামবাসীর সহযোগীতায় ১৯৫৬ সালে ডাকঘরটি স্থাপিত হয়৷
হুলহুলিয়া ডায়মন্ড ক্লাব
হুলহুলিয়া গ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে সবচেয়ে আলোচিত নাম দি-হুলহুলিয়া ডায়মন্ড ক্লাব৷ ১৯৪৪ সালে জনাব মোঃ মফিজ উদ্দিন প্রামানিক (হেড পন্ডিত) এর নেতৃত্বে এবং গ্রামের সকলের সার্বিক প্রচেষ্ঠায় দি হুলহুলিয়া ডায়মন্ড ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়৷ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এই ক্লাবটি অত্র গ্রামের সকল জনগণের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে পরিচালিত হয়ে আসছে৷
কবরস্থান উন্নয়ন কমিটি
চলন বিলের একটি প্রত্যন্ত এলাকায় অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামের নাম হুলহুলিয়া৷ পূর্বে এ গ্রামের প্রায় তিন চার মাস ব্যাপি জলমগ্ন থাকতো৷ যে কারণে পারিবারিক গোরস্থান হিসাবে পুকুর পার, ভিটাবাড়ীকেই কবর স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হতো৷